টেলিযোগাযোগ নীতিমালা
নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিমালায় হুমকিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা
আইরিন খাতুন, ঢাকা
প্রকাশ: ২০:৪৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২২:১৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সদ্য অনুমোদন পাওয়া টেলিযোগাযোগ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা হুমকির মুখে পড়বেন। সাত লাখের বেশি মানুষ কর্মসংস্থান হারাবেন বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি-এর সভাপতি আমিনুল হাকিম। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা না করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এ নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে বলে অভিযোগ ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে আইআইজিসহ ইন্টারনেট সঞ্চালন প্রতিষ্ঠানগুলোর। সকালে রাজধানীর একটি কমপ্লেক্সে টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোটার্স নেটওয়ার্ক টিআরএনবি এর মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানায় সংগঠনগুলোর সভাপতিরা।
গেল মাসে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং পলিসি ২০২৫ নামে নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হয়। নীতিমালায় ইন্টারনেট সঞ্চালন ব্যবস্থার চারটি স্তর বাদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এই স্তরগুলো হচ্ছে ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ আইসিএক্স, ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ নিক্স, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে আইজিডব্লিউ, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে আইআইজি। এসময় লাইসেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে স্তর কমানোর মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগী কমিয়ে প্রতিযোগিতামূলক সেবা নিশ্চিত করার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এছাড়াও পরিবর্তন আনা হয় আরো কিছু ধারায়।
এদিকে মতবিনিময় সভায় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আইআইজিএবি-এর মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ জানান, এ খাতে অনেক বড় বিনিয়োগ রয়েছে। তাই আইআইজিকে বিলুপ্ত না করে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএসপিতে রূপান্তরের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।
অনুমোদিত নীতিমালায় অসঙ্গতির পাশাপাশি এটি অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তমূলক জানিয়ে আইএসপিএবি এর সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, এই নীতিমালায় ক্ষুদ্র আইএসপিদের একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। জেলা ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের শুধু ইন্টারনেট ও ডেটা সার্ভিস দিতে বলা হয়েছে। তবে আইপি টেলিফোন ও আইপিটিভিসহ ইন্টারনেটের অন্যন্য ডিজিটাল সেবা তারা দিতে পারবেন না। এই ধারার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি খাতের তিনটি এনটিটিএন অপারেটরের পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই নামে-বেনামে এএনএসপি লাইসেন্স আছে। এটা থেকে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে। অথরাইজড গ্রাহক কানেক্ট করতে পারবে এনটিটিএন অপারেটররা। বিগত সরকার এরকম একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। ওই প্রজ্ঞাপন অপব্যবহার করে এএনএসপি অপারেটরদের ডোমেইনে ঢুকে অনেক ধরণের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করা হয়েছে। এই ধারাটি কোনোভাবেই থাকা উচিত নয়। প্রয়োজনীয় কিছু ধারা পরিবর্তন করা না হলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা হুমকিতে পড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান হারাবেন প্রায় ৭ লাখ মানুষ।
আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরামসহ অন্যান্য ইন্টারনেট সঞ্চালন সংগঠনের সদস্যরা জানান, আইনগত কাঠামো ও বাজারের অবস্থা বিবেচনা না করে নীতিমালা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়াও খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা ছাড়াই লুকোচুরি করে নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। নীতিমালায় সংশ্লিষ্টদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে সরকার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। একই সাথে ইন্টারনেটের দাম বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
এদিকে, খাত সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে নীতিমালাটি পুন:বিবেচনা করা না হলে আইনের আশ্রয় নেয়ার কথাও জানান আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম।