মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১৬ ভাদ্র ১৪৩২

বিটিআরসি আইন ২০১০ বাতিলের প্রস্তাব

নতুন সংশোধনী অধ্যাদেশ ২০২৫ খসড়া চূড়ান্ত

প্রকাশ: ১২:১৬, ১৪ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ১২:১৭, ১৪ আগস্ট ২০২৫

নতুন সংশোধনী অধ্যাদেশ ২০২৫ খসড়া চূড়ান্ত

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) আইন, ২০১০ বাতিল করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়নের খসড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়েছে।

কমিশনের লিগ্যাল শাখা থেকে জারি করা স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১০ সালের সংশোধনের মাধ্যমে বিটিআরসির প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে খর্ব হয়েছে, যা বিনিয়োগবান্ধব বাজার ও সুস্থ প্রতিযোগিতার পথে বড় অন্তরায় সৃষ্টি করেছে।

আইনি কাঠামোর বিবর্তন

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠিত হয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১ (বিটিআরএ ২০০১) অনুযায়ী, যার লক্ষ্য ছিল টেলিযোগাযোগ খাতকে স্বাধীন ও কার্যকর নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করা।

এই আইনে বিটিআরসিকে লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন, স্থগিতকরণ ও বাতিলকরণসহ নীতি প্রণয়নের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়।

তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) আইন, ২০১০ কার্যকর হওয়ার পর এই ক্ষমতার একটি বড় অংশ সরকারের পূর্বানুমতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। এর ফলে:

নীতিগত স্বাধীনতা সংকুচিত হয়

প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা বৃদ্ধি পায়

বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস পায়

নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগ তৈরি হয়

এই প্রেক্ষাপটেই বিটিআরসি নতুন সংশোধনী প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে ২০০১ সালের মূল আইনের স্বাধীনতা পুনঃস্থাপন ও ডিজিটাল যুগের প্রয়োজনীয়তা প্রতিফলনের কথা বলা হয়েছে।

প্রস্তাবিত সংশোধনীর মূল দিকসমূহ

১. মানবাধিকার ও টেলিযোগাযোগ সেবা

ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা বর্তমানে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত হওয়ায়, প্রস্তাবিত আইনে ধারা ৯৭ নতুনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে নাগরিকদের অধিকার অযৌক্তিকভাবে খর্ব না করার বিধান যুক্ত হয়েছে।

লফুল ইন্টারশেপশন-এ আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের সুপারিশ

একক গেটওয়ে এজেন্সি ও কোয়াসি-জুডিশিয়াল স্বীকৃতি ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব

নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ভারসাম্য নিশ্চিত করার নির্দেশনা

২. স্বাধীনতা বনাম জবাবদিহিতা

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন, হস্তান্তর, স্থগিতকরণ ও বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের স্বাধীনভাবে প্রয়োগের সুযোগ থাকা উচিত, যাতে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান না থাকে।

একইসঙ্গে বিদ্যমান জবাবদিহিতা কাঠামো বহাল থাকবে:

কমিশনার নিয়োগ সরকারের মাধ্যমে

আর্থিক বিবরণী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষণ ও সংসদে উপস্থাপন

মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের এখতিয়ার বহাল রাখা

৩. প্রযুক্তিগত অন্তর্ভুক্তি

ধারা ৩০-এ প্রস্তাবিত পরিবর্তনে:

নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা, পরীক্ষামূলক চালুকরণ ও প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা

ওটিটি, কনটেন্ট সেবা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সংজ্ঞা সংযোজন

তরঙ্গ শেয়ারিং, ট্রেডিং, লিজিং ও রি-ফার্ম করার সুযোগ

আইপিভি৪ থেকে আইপিভি৬ মাইগ্রেশন, QoS নিশ্চিতকরণ, লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয় প্রবিধান ও গাইডলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা

৪. রাজস্ব আদায়ে নতুন ক্ষমতা

নতুন ধারা ২৬(৩) যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে, যাতে বিটিআরসি পাওনা বকেয়া আদায়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।

বাজার ও নীতি পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়া

টেলিযোগাযোগ নীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংশোধনী কার্যকর হলে ২০০১ সালের আইনের মূল স্বাধীনতার কিছুটা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে পারে।

তবে 'ল'ফুল ইন্টরশেপশন সংক্রান্ত ধারা নিয়ে মানবাধিকার ও সাইবার সুরক্ষা সংগঠনগুলো অতিরিক্ত ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে কঠোর তদারকি ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠানো খসড়া পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন শেষে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে উপস্থাপন করবে।

অনুমোদন পেলে অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।

এ সম্পর্কিত খবর
আরও পড়ুন