একটি আইএসপিকে লাইসেন্স দিতে কত সরল বিটিআরসি !
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:৪৪, ১৩ মে ২০২৫ | আপডেট: ১৪:৩৮, ২১ মে ২০২৫

একটি ‘জাতীয় আইএসপি’ লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা গেল বিটিআরসিকে।
যেখানে নিজের নেয়া সিদ্ধান্ত নিজেই মানেনি নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
লাইসেন্স প্রার্থীর আবেদন গ্রহণ করার প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে অনিয়ম। আর লাইসেন্স দেয়ার সুযোগ না থাকার পরও তা দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। এসবের মধ্যেই আবেদনের পর ‘মাত্র’ দেড় মাসে লাইসেন্স দেয়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি।
জাতীয় আইএসপি’র লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় বিশেষ এই ছাড় পাওয়া কোম্পানিটির নাম আল আওয়াফ টেকনোলজিস লিমিটেড ( Alawaf Technologies Limited) ।
নিয়ম ভাঙল বিটিআরসি নিজেই :
বিটিআরসি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে লাইসেন্স ইস্যু অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এলআইএমএস) চালু করে। যেখানে হার্ডকপি বা অন্যকোনো মাধ্যমের পরিবর্তে অনলাইনে এই সিস্টেমের মাধ্যমে লাইসেন্সের আবেদন গ্রহণ করা হয়।
বিটিআরসি তাদের এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেছিল, কমিশনের সেবা সহজীকরণ বা ডিজিটাইজেশনের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ। এই অটোমেশনের ফলে এই লাইসেন্স কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হবে এবং এতে শৃঙ্খলা তৈরি হবে।
এরপর ২০২৫ সালের শুরুতে বিটিআরসি আরও দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দেয়, ‘২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ হতে লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট ইস্যু, নবায়ন, শেয়ার হস্তান্তর, ঠিকানা পরিবর্তন ও সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই হার্ডকপি ও ডি-নথির মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হবে না বা তা পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য বিবেচনায় আনা হবে না।’
বিটিআরসি ২০২৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এলআইএমএস সিস্টেমকে এড়িয়ে হার্ডকপিতে ‘আল আওয়াফ টেকনোলজিস লিমিটেড’ এর লাইসেন্সের আবেদন গ্রহণ করে।
অথচ এর কিছুদিন আগে বিটিআরসিই বিসিএস নেট নামে এক কোম্পানির বিভাগীয় লাইসেন্সের আবেদন নিয়ম ভেঙ্গে হার্ডকপিতে নেয়ায় এক কর্মকর্তাকে অফিসিয়ালি বলেছিল যে, এতে আবেদনকারীকে অন্যায় সুবিধা গ্রহণের পথ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
আবেদনেরই সুযোগ নেই, সেখানে ‘অনুমোদন’ :
বিটিআরসির ‘বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (আইএসপি) সংখ্যা নিরূপণসংক্রান্ত নীতিমালা’ অনুযায়ী জাতীয় লাইসেন্সের সংখ্যা পর্যাপ্ত বিধায় এই ক্যাটাগরিতে আর কোনো লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়নি। এরপর অন্যান্য ক্যাটাগরির লাইসেন্স আবেদন নেয়া হলেও জাতীয় ক্যাটাগরিতে নতুন করে লাইসেন্স আবেদন নেয়াই বন্ধ রয়েছে।
এই হিসেবে ‘আল আওয়াফ টেকনোলজিস লিমিটেড’ এই জাতীয় ক্যাটাগরির জন্য আবেদনই করতে পারার কথা নয়। সেখানে নীতিগত অনুমোদন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আইএসপি খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তরা বলছেন, বিটিআরসির কাছে আপগ্রেডেশনের জন্য অনেক আগেই অনেক আবেদন পড়ে রয়েছে। যাদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রাহক রয়েছে। বিটিআরসি সেখানে জাতীয় ক্যাটাগরিরর লাইসেন্সের সুযোগ নেই বলে আপগ্রেডেশন দিচ্ছে না।
বিটিআরসি ‘আল আওয়াফ টেকনোলজিসের’ আবেদন বিবেচনায় নিয়েছে এবং লাইসেন্স দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা সরকারের পূর্বানুমোদেনের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে প্রতিবেদনসহ চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে।
নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে ভাষ্য :
বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, তারা এই লাইসেন্সের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে কোনো চিঠি দেননি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব টেকশহর ডটকমকে বলেন, তাঁর টেবিলে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি তিনি এখনও পাননি।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ কোথাও এতটুকু অনিয়ম হলে তাঁর দপ্তরে সেটি অনুমোদনের কোনো সুযোগ নেই।’