বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

| ২৬ কার্তিক ১৪৩২

হিংসাত্মক আক্রমণ

ক্ষুদ্র আইএসপির বিপদ ও সরকারের সুরক্ষা উদ্যোগ

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

প্রকাশ: ১৪:৪১, ৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:১২, ৯ নভেম্বর ২০২৫

ক্ষুদ্র আইএসপির বিপদ ও সরকারের সুরক্ষা উদ্যোগ

ইলাস্ট্রেশন বানিয়েছে চ্যাটজিপিটি

বাংলাদেশের জেলা উপজেলা পর্যায়ে ক্ষুদ্র আঞ্চলিক আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটি সংগঠিত প্রচেষ্টার ব্যাপার আমাদের নজরে এসেছে।  রকম প্রেক্ষাপটে আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী:

- কিছু বড় আইএসপি বা গোষ্ঠী ছোট অপারেটরদের নেটওয়ার্কে নিয়মিতভাবে ডিডস (DDoS) আক্রমণ চালাচ্ছে, যার ফলে এসব আইএসপি ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে।

- এই আক্রমণগুলোর লোড কিছু ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৭০০ গিগা পর্যন্ত হয়, যা ছোট নেটওয়ার্কের পক্ষে সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব।

- ফলে ছোট আইএসপি-রা তাদের গ্রাহক হারাচ্ছে, এবং বড় কোম্পানিগুলো অন্যায্যভাবে বাজার দখল করছে।

উল্লেখ্য যে, ন্যাশনাল আইএসপি কোম্পানিগুলোর কেউ কেউ নতুন টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কিং লাইসেন্সিং এর ভুল ব্যাখ্যা করে ছোট আইএসপি গুলোর অস্তিত্ব থাকবে বা এমন ভয় দেখিয়ে একোয়ার করার চেষ্টা করছে, এই প্রক্রিয়াটিকে আমরা অপরাধ হিসেবে গণ্য করছি। নতুন টেলিকম লাইসেন্স নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, ছোট আইএসপিগুলো বর্তমানের অপারেটিং এরিয়ার পাশাপাশি পুরো জেলায় অপারেট করতে পারবে, অর্থাৎ আমরা তাদের কাজের ক্ষেত্রকে সম্প্রসারণের সুযোগ দিয়েছি।

পাশাপাশি আইএসপি নবায়নের ক্ষেত্রে ন্যাশনাল আইএসপি পর্যায়ে লাইসেন্স ফি কিছুটা বাড়িয়ে তা দিয়ে জেলা (উপজেলা সহ) পর্যায়ের লাইসেন্সকে কিছুটা কম্পেন্সেট করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি, এতে করে ছোট আইএসপিদের লাইসেন্স ফি যৌক্তিকভাবে কমে আসবে কিংবা একই থাকবে, তবে বাড়বে না।

বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ:

- মন্ত্রণালয় বিটিআরসি যৌথভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এই সাইবার অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।

- খুব দ্রুতই খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যাবে বলে আমরা আশাবাদী।

- একই সঙ্গে, যে কোনো বড় আইএসপি সিন্ডিকেট বা বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা রোধে মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

ছোট আঞ্চলিক আইএসপি-দের জন্য সুসংবাদ:

- নতুন টেলিকম লাইসেন্স নীতিমালায় ছোট আইএসপি-রা এখন নিজেদের অপারেটিং এলাকা ছাড়াও পুরো জেলায় কার্যক্রম চালাতে পারবে।

- আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি যাতে জেলা পর্যায়ের লাইসেন্স ফি আরও যুক্তিসংগত করা যায় (দরকারে কিছুটা কমিয়ে)—যাতে প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তারা টিকে থাকতে পারেন।

- আমরা আইএসপি-কে ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প হিসেবে বিবেচনা করি, তাই তাদের স্বার্থ রক্ষা করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

লাইসেন্সিং মূল্যনীতি বিষয়ে অবস্থান:

- সম্প্রতি FTSP মূল্যনীতি নেটওয়ার্ক লাইসেন্সিং নিয়ে কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

- আমরা মন্ত্রণালয় হিসেবে বিটিআরসি-কে সম্পূর্ণ সম্মান করি, তাই প্রস্তাবিত FTSP মূল্যনীতি বিষয়ে আমরা এখনই আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করব না।

- বরং BTRC থেকে ANSP নির্দেশিকা (Guideline) আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়ার পর আমরা সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে নীতিগত অবস্থান চূড়ান্ত করব।

উল্লেখ্য যে, BTRC' প্রস্তাবনায় থাকা সম্ভাব্য ফি/চার্জ গুলোকে এমনভাবে সংশোধন করার চেষ্টা হবে যাবে ইন্টারনেটের দাম মূল্যস্ফীতির 'বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত' হারের চেয়ে বেশি না হয়।

এখানে রেভিনিউ শেয়ারিং এর বিষয়টিকেও এড্রেস করা হবে। আমরা মনে করি আইএসপি গুলোর SOF (Social Obligation Fund) ফান্ডের আওতায় আসা দরকার। এতে করে এসওএফ ফান্ডের বাইরে থাকা আইএসপি খাত এখান থেকে বেনেফিশিয়ারি হতে পারবে। বর্তমানে আইএসপি কোম্পানি গুলো SOF অনুদান দেয়না বলে তারা এই ফান্ডের সুবিধাভোগী হতে পারছে না। আমরা এটিকে একটি যুগান্তকারী রিফর্ম হিসেবে বিবেচনা করি।

আমাদের প্রতিশ্রুতি:

- বাজার থেকে ছোট আইএসপি-দের বের করে দেওয়ার যে কোনো অপচেষ্টা রুখে দেওয়া হবে।

- ডিডস আক্রমণকারীদের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

- একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায্য প্রতিযোগিতামূলক ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম নিশ্চিত করা হবে।

উল্লেখ্য যে, ডিডস আক্রমণে অভিযুক্ত/অপরাধী প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো আবেদন, নবায়ন, নাম পরিবর্তন কিংবা শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত শতভাগ বন্ধ থাকবে।

আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে ইন্টারনেটের প্রবেশাধিকার (Access to Internet) কোনো বিলাসিতা নয়এটি নাগরিক অধিকার যা সাইবার সুরক্ষা আইন ২০২৫ স্বীকৃত।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা টিকে থাকলেই দেশের ডিজিটাল ইকোনমি টেকসইভাবে বৃদ্ধি পাবে।

 

 লেখক: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী,ডাক, টেলিযোগাযোগ তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়

 

সূত্র: ফেসবুক হ্যান্ডেল

আরও পড়ুন