প্রতিনিয়তই বাড়ছে ওটিটির বিনিয়োগ ও জনপ্রিয়তা, নেপথ্যে কী?
প্রকাশ: ১৩:২৬, ১৩ মে ২০২৫

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওটিটি মাধ্যম বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরুর পর থেকেই এটি যেন রেসের ঘোড়ার মতো দৌড়াচ্ছে, আশা সঞ্চার করে চলেছেন প্রতিনিয়ত শোবিজ অঙ্গনে। এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যেমন অনেক জনপ্রিয় কনটেন্ট পাচ্ছেন দর্শক, তেমনি উঠে আসছে নতুন শিল্পী থেকে শুরু করে নির্মাতা ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। আর তাতে করে বাড়ছে বিনিয়োগ।
প্রতিনিয়ত এখানে তৈরি হচ্ছে সিরিজ থেকে শুরু করেন ওয়েব সিনেমা। শুধু তাই নয়, ওটিটি নিয়ে আসছে বাংলায় ডাবিংকৃত বিদেশি সব সিরিজ। যা রয়েছে দর্শকদের পছন্দের তালিকায়। এসবের পেছনে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছেন বিনিয়োগকারীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এখানে বিনিয়োগকারী আসছেন, কারণ এখানে লগ্নিকৃত অর্থ ফেরতের বিষয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। নিশ্চয়তা রয়েছে শতভাগ।’
এদিকে মার্কিন নিউজ কনটেন্ট পাবলিশার কোম্পানি বিজনেসওয়্যারের হিসাবে, ২০১৯ সালে বিশ্ব ওটিটি বাজারের মূল্য ছিল ৮ হাজার ৫১৬ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২৫ সালে তা ১৯ হাজার ৪০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘পাই স্ট্র্যাটেজি’র হিসাবে ২০১৯ সালের শেষদিকে বাংলাদেশে নেটফ্লিক্সের গ্রাহক ছিল ২ লাখ।
বর্তমানে এর সংখ্যা কত সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও দিন দিন গ্রাহক বাড়ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের গ্রাহক বাড়তে থাকায় নতুন দেশি প্ল্যাটফর্ম যেমন চালু হয়েছে, তেমনি বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর বিস্তারের কারণে এখানে দিন দিন বিনিয়োগ বাড়ছে।
ওটিটিতে জনপ্রিয় হয়েছে এমন কনটেন্টের সংখ্যাও অনেক। তবু কিছু উল্লেখযোগ্য কনটেন্টের তালিকায় রয়েছে-‘মহানগর’, ‘কারাগার’, ‘তাকদীর’, ‘ষ’, ‘সাবরিনা’, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’, ‘বোধ’, ‘দুই দিনের দুনিয়া’, ‘কাইজার’, ‘মরীচিকা’, ‘বলি’, ‘ইন্টার্নশিপ’, ‘ব্ল্যাকমেইল’, ‘তীরন্দাজ’, ‘ইনফিনিটি’, ‘সাড়ে ষোল’, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’, ‘জাগো বাহে’, ‘শাটিকাপ’, ‘কন্ট্রাক্ট’, ‘মানি হানি’, ‘ইতি, তোমারই ঢাকা’, ‘ঊণলৌকিক’, ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলমেন’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’, ‘উনিশ ২০’, ‘আমি কী তুমি, ‘মারকিউলিস’, ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’, ‘ফ্রাইডে’, ‘কুহেলিকা’, ‘নিকষ’।
এছাড়া ‘বুকের ভেতর আগুন’, ‘গোলাম মামুন’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘জিম্মি’, ‘মোবারকনামা’, ‘টিকিট’, ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’, ‘নীল জলের কাব্য’, ‘চক্র’, ‘কালপুরুষ’, ‘ফরগেট মি নট’, ‘অসময়’, ‘হাউ সুইট’ ইত্যাদি।
যাত্রালগ্নে বেশিরভাগ সিরিজ অপরাধ জগতের গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে নির্মিত হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন এ ধারায়ও এসেছে পরিবর্তন। নানা ধরনের গল্পেই এখন নতুন সব সিরিজ তৈরি হচ্ছে। যা দর্শকদের মাধ্যমটির দিকে আরও বেশি আকৃষ্ট করছে। আর এ মাধ্যমে কাজ করতে ঝুঁকছেন একসময়ের জনপ্রিয় টিভি নাটকের শিল্পীরা।
সেসব শিল্পীদের এখন ব্যস্ততা বেশি ওটিটি কনটেন্টের কাজ নিয়েই। ওয়েব দুনিয়ায় এখন কাজ করতে বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করছেন শিল্পীরা। তাতে বর্ণিল হয়ে উঠছে দেশি এ সিরিজগুলোও। দর্শকদেরও সিরিজের ক্ষুধা যেন দিনে দিনে বাড়ছে। এজন্যই ধারাবাহিকভাবেই নির্মিত হচ্ছে সিরিজ। এক সিজন শেষ হতে না হতেই নতুন সিজনের ঘোষণাও দিচ্ছেন নির্মাতারা।
কেন ওটিটিতে দর্শকদের আগ্রহ বাড়ছে? এটি জানতে কথা হয় এ মাধ্যমের একাধিক পরিচালক-প্রযোজক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। তাদের বক্তব্য, এখানে স্বাধীনভাবে কাজ করা যায়, ফলে নির্মাতারা তাদের গল্প স্বাধীনভাবে বলতে পারছেন। আর এসব কনটেন্ট শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। নতুন শিল্পীরা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। এ ছাড়াও এখানে গল্পকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বলা হয়, ওটিটির হিরো হচ্ছে গল্প। তাই যিনি ভালোভাবে গল্পটা তুলে ধরতে পারছেন তার কাজ দর্শক নিচ্ছেন।
এ ছাড়াও নতুন বিনিয়োগ আসায় আর্থিক সংস্থান নিয়েও কলাকুশলীদের চিন্তা কম। আরেকটা বিষয়, একসময়ে টেলিভিশনে যে ধারা ছিল, সেখানে বাজেটের কিছু সমস্যা ছিল। এখানে সেটা অনেকটাই নেই।
এছাড়া টেলিভিশন বা অন্য ট্র্যাডিশনাল মাধ্যমগুলো অনেকটাই পারিবারিক। ওটিটি সেখানে ব্যক্তিগত। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এখানে যে কেউ সিরিজ এবং সিনেমা দুটোই বানাতে পারছেন। টেলিভিশন নাটকের সময়সীমার একটা বিষয় থাকে। এখানে সেই বাধ্যবাধকতা কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওটিটির নীতি নির্ধারক হচ্ছেন দর্শক। দর্শক তার পছন্দমতো কনটেন্ট এখানে দেখছেন। টেলিভিশন বা সিনেমাহলে দর্শক তার সময়মতো দেখতে পারেন না। অনলাইনে সেটা সম্ভব। ওটিটি জনপ্রিয় হওয়ার এটা অন্যতম কারণ। এর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাওয়াতে এখানে
নতুন গল্পকার, পরিচালক, অভিনয় শিল্পীদেরও আগ্রহ বাড়ছে। তাতে করে কাজের পরিধিও বেড়েছে। এটিও ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।